সুরমা নদীর কোল ঘেঁষে সিলেট
নগরী, সুনামগঞ্জ জেলা সদর। এ
নদীর তীরেই কানাইঘাট,
বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,
বিশ্বনাথ, ছাতক, দোয়ারাবাজার,
জামালগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ
পৌরশহর-উপজেলা। বৃহত্তর
সিলেটের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের
বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা অপরূপা
এ নদীর নাম সুরমা। জনশ্রুতি
অনুযায়ী, রাজা ক্ষেত্রপালের
স্ত্রী সুরম্যা এর নাম থেকেই এ
নদীর নাম সুরমা।
আগে এর নাম ছিলো বড়-বকরো বা
বরবক্র নদী। এই বরবক্রের নিদর্শন
আছে প্রাচীন বাংলা সাহিত্য ও
শাস্ত্রে। তীর্থ চিন্তামণিতে
বরবক্র বা বরাক নদীর বর্ণনা
পাওয়া যায়। প্রাচীন পুরাণে
বর্ণিত শরাবতীকে অনেকেই
সিলেটের সুরমা বলে মনে করেন।
বরবক্র নদীতে স্নান করলে সব পাপ
দূর হয় বলে বিশ্বাস প্রচলিত আছে
হিন্দু সমাজে। বলা হয়ে থাকে,
হযরত শাহজালাল তার বাহিনী
নিয়ে সিলেটের উপকণ্ঠে পৌঁছুলে
সুরমা নদীতে চলাচলকারী সব
নৌকা বন্ধ করে দেন রাজা
গৌড়গোবিন্দ।
সে সময় নিজের জায়নামাজে
চেপে সুরমা পার হন শাহজালাল।
রাজা অমর মাণিক্য (১৫৯৭-১৬১১)
অনন্ত স্বর্গে গমনের আশায় বরবক্র ও
মনু নদীর ‘মহাপবিত্র’ সঙ্গমস্থলে
গিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন
বলে বলা আছে সতের শতকের
শেষভাগে রচিত ত্রিপুরার
রাজাদের ইতিহাস সংবলিত
রাজমালা কাব্যে। হিজরি তৃতীয়
শতকে সুরমা তীরের সিলেট
বন্দরের বর্ণনা দিয়েছেন আরব
পর্যটক সোলায়মান ছয়রাফী।
মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬
খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালালের
সঙ্গে মোলাকাতের জন্য নহরে
আজরক দিয়ে সিলেট আসেন।
আরবীতে আজরক অর্থ নীল রং।
আর নহরে আজরক অর্থ নীল রঙের
নদী। এই নীল পানির নদীই আজকের
সুরমা। এক সময় এই নদীই ছিলো
সিলেটের জীবন-জীবিকার প্রধান
উৎস। নদীর দু’পাড়ে গড়ে উঠেছিল
নগর, বন্দর, জনপদ। সড়ক পথে
যোগাযোগ গড়ে ওঠার আগে
সিলেটের সঙ্গে বাংলা ও এর
পার্শ্ববর্তী ভূ-খন্ডের ব্যবসা-
বাণিজ্য হতো সুরমা কলকাতা
থেকে জলপথে ঢাকা এসে
বুড়িগঙ্গা ও মেঘনা পেরিয়ে পড়তে
হতো সুরমায়। ছোট মেঘনা দিয়ে
সুরমা হয়ে সবচেয়ে সোজা ও
সংক্ষিপ্ত পথে দাউদকান্দি থেকে
সিলেট যাওয়া যেতো। কৃষিই ছিল
তখনকার সুরমাপাড়বাসীর প্রধান
জীবিকা।
হস্ত-কারুশিল্পের পাশাপাশি
লৌহ আর জাহাজ নির্মাণ
শিল্পেরও প্রভাবও ছিলো সুরমা
পাড়ে। আরো ছিলো প্রচুর হাতি।
তাই হাতির দাঁতের পাটি পাওয়া
যেতো সুরমা পাড়ে। চুলের মতো
চিকন বেত তৈরি করে পাটি বোনা
ছাড়াও হাতির দাঁত থেকে তৈরি
হতো পাখা, চুড়ি, চিরুনি এবং খড়ম,
লাঠি, দাবা ও পাশা খেলার গুটি।
মুর্তা নামে এক প্রকার জংলী বৃক্ষ
থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বেত
সংগ্রহ করে বোনা নকশী শীতল
পাটি এবং বাঁশ-বেতের আসবাবও
এই সুরমা পাড়ের ঐহিত্যময় গৌরব।
সুরমা পাড়ের জঙ্গলে জন্মানো
জালিবেত দিয়ে তৈরি হতো খাট,
চেয়ার, টেবিল, শেলফ, বাক্স-
পেটরা, সোফা।
এ নদীতে মাছ ধরা হতো
ঝাকিজাল, উড়াজাল, উথালজাল,
হৈফাজাল, হাটজাল ও
পেলুইনজালে। মোদ্দা কথা,
সুরমাকে কেন্দ্র করেই গড়ে
উঠেছিলো সিলেটের সংস্কৃতি ও
সভ্যতা। বৃহত্তর সিলেটের প্রকৃতি ও
জীবনের সঙ্গে এ নদীর সম্পর্ক
অবিচ্ছেদ্য। বর্তমানের সুরমা
পাড়ে দেখা যাবে, বড়লাট
নর্থব্রুককে অভ্যর্থনা জানাতে
নির্মিত চাঁদনীঘাটের প্রাচীন
সিঁড়ি। নগরীর প্রবেশ মুখে সুরমার
উপরে স্থাপিত আসামের গভর্নর
মাইকেল ক্কিন এর স্মৃতিধন্য
ধনুকাকার স্টিলের ব্রিজটি তো
সিলেটের আইকন হিসেবেই
পরিচিত হয়ে উঠেছে। চাঁদনীঘাট ও
ক্কিন ব্রিজের পাশেই পৃথিম
পাশার বিখ্যাত জমিদার আলী
আমজাদের গড়া ঘড়িঘর সাক্ষী
বইছে দিল্লীর শাহজাদী
জাহানারার চাঁদনিচকের ঘড়িঘর
অনুকরণের। সিলেটে সুরমার উপরে
আরো গড়া হয়েছে শাহজালাল
ব্রিজ, শাহপরান ব্রিজ ও
টুকেরবাজার ব্রীজ। সুনামগঞ্জ শহর
ঘেঁষেও ব্রিজ আছে সুরমার ওপর।
আরো আছে অসামান্য সব গানের
কারিগর হাছন রাজার বাড়ি ও
জাদুঘর। এই সুরমার জন্ম উত্তর-পূর্ব
ভারতের মনিপুর পাহাড়ের মাও
সংসাংয়ে। ভারতীয় অংশে এর
নাম এখনো বরাকই আছে।
সিলেটের কানাইঘাটে আসামের
কাছাড় জেলার অমলসিদের কাছে
বাংলাদেশের বদরপুরে প্রবেশের
পর দু’ভাগ হয়ে গেছে বরাক।
উত্তরের শাখাটি সুরমা আর
দক্ষিণের শাখাটি প্রবাহিত
হয়েছে কুশিয়ারা নামে। বরাক-
সুরমা-কুশিয়ারার সঙ্গমস্থল
পরিচিত ত্রিবেনী নামে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরববাজারের
কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা পুনরায়
মিলিত হয়ে গঠন করেছে মেঘনা
নদী। অমলসিদের ত্রিবেনীতে
বাংলাদেশে প্রবেশ করেই উত্তরে
বাঁক নেওয়া সুরমা নদী
আকাশমল্লিক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে
২৬ কিলোমিটার এলাকায়
সীমান্ত হয়ে বেড় দিয়ে আছে
বাংলাদেশকে। ভারতের
খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে
আসা লোভাছড়া কানাইঘাটের
কাছে চারিপাড়ায় পতিত হয়েছে
সুরমায়। এই লোভাছড়া দিয়েই
আসে সুরমার ৬০ শতাংশ পানির
যোগান। এর বাইরে বরাকসহ কিছু
শাখা নদী দিয়ে ৩০ ভাগ পানি
মেশে সুরমায়। অবশিষ্ট ১০ ভাগ
আসে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের
বিভিন্ন ছড়া-খাল ও বৃষ্টির প্রবাহ
থেকে। অমলসিদের ত্রিবেনী
থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমার দৈর্ঘ্য
প্রায় ১৬৪ কিলোমিটার।
ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৪০
কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ থেকে
দক্ষিণ-পশ্চিমে ১১ কিলোমিটার
দূরে পাইন্দা নামক স্থানে সুরমা
ভাগ হয়ে গেছে দুই শাখায়।
দক্ষিণমুখী শাখাটি চাঁদপুর-দিরাই
হয়ে মারকুলিতে মিলিত হয়েছে
কুশিয়ারার সঙ্গে। এক সময় এই
ধারাটিই ছিলো সুরমার মূল প্রবাহ
পথ। তবে পুরাতন সুরমা নামে
পরিচিত এই ধারা এখন মৃতপ্রায়।
এরও আগে সুরমার এই শাখাটি
দিরাই-চাঁদপুরের ৪ কি.মি. উজানে
সুজানগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে
প্রবাহিত হয়ে আজমিরীগঞ্জে
কালনী নদীতে পড়ে ।
এই ধারার পরিচিতি এখন মরা
সুরমা। সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত
প্রবাহ কালনী নামে দক্ষিণে
কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে নাম
নিয়েছে মেঘনা। দ্বিতীয়
শাখাটি পাইন্দা থেকে ৮
কিলোমিটার এগিয়ে উত্তর-
পশ্চিমে মোড় নিয়ে প্রায় ৯
কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফের
দক্ষিণ-পশ্চিমে বাঁক নিয়ে
লালপুরে বাইলাই নদীতে পড়েছে।
পরে এই শাখাটি বিভিন্ন নাম
ধারণ করে মেঘনায় মিলিত হয়েছে
দিলালপুরে। অমলসিদের ত্রিবেনী
থেকে দিলালপুরে মেঘনায় পতিত
হওয়া পর্যন্ত সুরমা পাড়ি দিয়েছে
প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার পথ।
মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ থেকে
নেমে আসা বিভিন্ন নদী ও
স্রোতধারা মিলিত হয়েছে সুরমার
ধারায়।
নগরী, সুনামগঞ্জ জেলা সদর। এ
নদীর তীরেই কানাইঘাট,
বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ,
বিশ্বনাথ, ছাতক, দোয়ারাবাজার,
জামালগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ
পৌরশহর-উপজেলা। বৃহত্তর
সিলেটের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের
বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকা অপরূপা
এ নদীর নাম সুরমা। জনশ্রুতি
অনুযায়ী, রাজা ক্ষেত্রপালের
স্ত্রী সুরম্যা এর নাম থেকেই এ
নদীর নাম সুরমা।
আগে এর নাম ছিলো বড়-বকরো বা
বরবক্র নদী। এই বরবক্রের নিদর্শন
আছে প্রাচীন বাংলা সাহিত্য ও
শাস্ত্রে। তীর্থ চিন্তামণিতে
বরবক্র বা বরাক নদীর বর্ণনা
পাওয়া যায়। প্রাচীন পুরাণে
বর্ণিত শরাবতীকে অনেকেই
সিলেটের সুরমা বলে মনে করেন।
বরবক্র নদীতে স্নান করলে সব পাপ
দূর হয় বলে বিশ্বাস প্রচলিত আছে
হিন্দু সমাজে। বলা হয়ে থাকে,
হযরত শাহজালাল তার বাহিনী
নিয়ে সিলেটের উপকণ্ঠে পৌঁছুলে
সুরমা নদীতে চলাচলকারী সব
নৌকা বন্ধ করে দেন রাজা
গৌড়গোবিন্দ।
সে সময় নিজের জায়নামাজে
চেপে সুরমা পার হন শাহজালাল।
রাজা অমর মাণিক্য (১৫৯৭-১৬১১)
অনন্ত স্বর্গে গমনের আশায় বরবক্র ও
মনু নদীর ‘মহাপবিত্র’ সঙ্গমস্থলে
গিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন
বলে বলা আছে সতের শতকের
শেষভাগে রচিত ত্রিপুরার
রাজাদের ইতিহাস সংবলিত
রাজমালা কাব্যে। হিজরি তৃতীয়
শতকে সুরমা তীরের সিলেট
বন্দরের বর্ণনা দিয়েছেন আরব
পর্যটক সোলায়মান ছয়রাফী।
মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬
খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহজালালের
সঙ্গে মোলাকাতের জন্য নহরে
আজরক দিয়ে সিলেট আসেন।
আরবীতে আজরক অর্থ নীল রং।
আর নহরে আজরক অর্থ নীল রঙের
নদী। এই নীল পানির নদীই আজকের
সুরমা। এক সময় এই নদীই ছিলো
সিলেটের জীবন-জীবিকার প্রধান
উৎস। নদীর দু’পাড়ে গড়ে উঠেছিল
নগর, বন্দর, জনপদ। সড়ক পথে
যোগাযোগ গড়ে ওঠার আগে
সিলেটের সঙ্গে বাংলা ও এর
পার্শ্ববর্তী ভূ-খন্ডের ব্যবসা-
বাণিজ্য হতো সুরমা কলকাতা
থেকে জলপথে ঢাকা এসে
বুড়িগঙ্গা ও মেঘনা পেরিয়ে পড়তে
হতো সুরমায়। ছোট মেঘনা দিয়ে
সুরমা হয়ে সবচেয়ে সোজা ও
সংক্ষিপ্ত পথে দাউদকান্দি থেকে
সিলেট যাওয়া যেতো। কৃষিই ছিল
তখনকার সুরমাপাড়বাসীর প্রধান
জীবিকা।
হস্ত-কারুশিল্পের পাশাপাশি
লৌহ আর জাহাজ নির্মাণ
শিল্পেরও প্রভাবও ছিলো সুরমা
পাড়ে। আরো ছিলো প্রচুর হাতি।
তাই হাতির দাঁতের পাটি পাওয়া
যেতো সুরমা পাড়ে। চুলের মতো
চিকন বেত তৈরি করে পাটি বোনা
ছাড়াও হাতির দাঁত থেকে তৈরি
হতো পাখা, চুড়ি, চিরুনি এবং খড়ম,
লাঠি, দাবা ও পাশা খেলার গুটি।
মুর্তা নামে এক প্রকার জংলী বৃক্ষ
থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বেত
সংগ্রহ করে বোনা নকশী শীতল
পাটি এবং বাঁশ-বেতের আসবাবও
এই সুরমা পাড়ের ঐহিত্যময় গৌরব।
সুরমা পাড়ের জঙ্গলে জন্মানো
জালিবেত দিয়ে তৈরি হতো খাট,
চেয়ার, টেবিল, শেলফ, বাক্স-
পেটরা, সোফা।
এ নদীতে মাছ ধরা হতো
ঝাকিজাল, উড়াজাল, উথালজাল,
হৈফাজাল, হাটজাল ও
পেলুইনজালে। মোদ্দা কথা,
সুরমাকে কেন্দ্র করেই গড়ে
উঠেছিলো সিলেটের সংস্কৃতি ও
সভ্যতা। বৃহত্তর সিলেটের প্রকৃতি ও
জীবনের সঙ্গে এ নদীর সম্পর্ক
অবিচ্ছেদ্য। বর্তমানের সুরমা
পাড়ে দেখা যাবে, বড়লাট
নর্থব্রুককে অভ্যর্থনা জানাতে
নির্মিত চাঁদনীঘাটের প্রাচীন
সিঁড়ি। নগরীর প্রবেশ মুখে সুরমার
উপরে স্থাপিত আসামের গভর্নর
মাইকেল ক্কিন এর স্মৃতিধন্য
ধনুকাকার স্টিলের ব্রিজটি তো
সিলেটের আইকন হিসেবেই
পরিচিত হয়ে উঠেছে। চাঁদনীঘাট ও
ক্কিন ব্রিজের পাশেই পৃথিম
পাশার বিখ্যাত জমিদার আলী
আমজাদের গড়া ঘড়িঘর সাক্ষী
বইছে দিল্লীর শাহজাদী
জাহানারার চাঁদনিচকের ঘড়িঘর
অনুকরণের। সিলেটে সুরমার উপরে
আরো গড়া হয়েছে শাহজালাল
ব্রিজ, শাহপরান ব্রিজ ও
টুকেরবাজার ব্রীজ। সুনামগঞ্জ শহর
ঘেঁষেও ব্রিজ আছে সুরমার ওপর।
আরো আছে অসামান্য সব গানের
কারিগর হাছন রাজার বাড়ি ও
জাদুঘর। এই সুরমার জন্ম উত্তর-পূর্ব
ভারতের মনিপুর পাহাড়ের মাও
সংসাংয়ে। ভারতীয় অংশে এর
নাম এখনো বরাকই আছে।
সিলেটের কানাইঘাটে আসামের
কাছাড় জেলার অমলসিদের কাছে
বাংলাদেশের বদরপুরে প্রবেশের
পর দু’ভাগ হয়ে গেছে বরাক।
উত্তরের শাখাটি সুরমা আর
দক্ষিণের শাখাটি প্রবাহিত
হয়েছে কুশিয়ারা নামে। বরাক-
সুরমা-কুশিয়ারার সঙ্গমস্থল
পরিচিত ত্রিবেনী নামে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরববাজারের
কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা পুনরায়
মিলিত হয়ে গঠন করেছে মেঘনা
নদী। অমলসিদের ত্রিবেনীতে
বাংলাদেশে প্রবেশ করেই উত্তরে
বাঁক নেওয়া সুরমা নদী
আকাশমল্লিক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে
২৬ কিলোমিটার এলাকায়
সীমান্ত হয়ে বেড় দিয়ে আছে
বাংলাদেশকে। ভারতের
খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে
আসা লোভাছড়া কানাইঘাটের
কাছে চারিপাড়ায় পতিত হয়েছে
সুরমায়। এই লোভাছড়া দিয়েই
আসে সুরমার ৬০ শতাংশ পানির
যোগান। এর বাইরে বরাকসহ কিছু
শাখা নদী দিয়ে ৩০ ভাগ পানি
মেশে সুরমায়। অবশিষ্ট ১০ ভাগ
আসে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের
বিভিন্ন ছড়া-খাল ও বৃষ্টির প্রবাহ
থেকে। অমলসিদের ত্রিবেনী
থেকে ছাতক পর্যন্ত সুরমার দৈর্ঘ্য
প্রায় ১৬৪ কিলোমিটার।
ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ৪০
কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ থেকে
দক্ষিণ-পশ্চিমে ১১ কিলোমিটার
দূরে পাইন্দা নামক স্থানে সুরমা
ভাগ হয়ে গেছে দুই শাখায়।
দক্ষিণমুখী শাখাটি চাঁদপুর-দিরাই
হয়ে মারকুলিতে মিলিত হয়েছে
কুশিয়ারার সঙ্গে। এক সময় এই
ধারাটিই ছিলো সুরমার মূল প্রবাহ
পথ। তবে পুরাতন সুরমা নামে
পরিচিত এই ধারা এখন মৃতপ্রায়।
এরও আগে সুরমার এই শাখাটি
দিরাই-চাঁদপুরের ৪ কি.মি. উজানে
সুজানগর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে
প্রবাহিত হয়ে আজমিরীগঞ্জে
কালনী নদীতে পড়ে ।
এই ধারার পরিচিতি এখন মরা
সুরমা। সুরমা ও কুশিয়ারার মিলিত
প্রবাহ কালনী নামে দক্ষিণে
কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে নাম
নিয়েছে মেঘনা। দ্বিতীয়
শাখাটি পাইন্দা থেকে ৮
কিলোমিটার এগিয়ে উত্তর-
পশ্চিমে মোড় নিয়ে প্রায় ৯
কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফের
দক্ষিণ-পশ্চিমে বাঁক নিয়ে
লালপুরে বাইলাই নদীতে পড়েছে।
পরে এই শাখাটি বিভিন্ন নাম
ধারণ করে মেঘনায় মিলিত হয়েছে
দিলালপুরে। অমলসিদের ত্রিবেনী
থেকে দিলালপুরে মেঘনায় পতিত
হওয়া পর্যন্ত সুরমা পাড়ি দিয়েছে
প্রায় ৩৫৫ কিলোমিটার পথ।
মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ থেকে
নেমে আসা বিভিন্ন নদী ও
স্রোতধারা মিলিত হয়েছে সুরমার
ধারায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন