বুধবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৭

সিলেট-২ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী ?

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আরো ২
বছর বাকি। তবে এরই মধ্যে সরকারী
দল আওয়ামীলীগ আগামী
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে
দিয়েছে। অক্টোবরে আওয়ামী
লীগের সম্মেলনে সভানেত্রী
পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
শনিবার (১৪ জানুয়ারী) প্রথম
ধানমণ্ডিতে নিজের রাজনৈতিক
কার্যালয়ে গিয়ে বলেন, আগামী
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন ।
তার ঘোষণার পর থেকেই
সারাদেশে আওয়ামীলীগ দলীয়
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নড়েচড়ে
বসেছেন। ব্যাতিক্রম নয় সিলেট-২
আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ।
প্রকাশ্য না হলেও তারা নীরবে
চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের লবিং।
বরাবরের মতো এবারও সিলেট-২
আসনে কে পাবেন দলীয় টিকেট তা
নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কে
হবেন সিলেট-২ আসনের নৌকার
কান্ডারী ? দলীয় প্রধান ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কার
হাতে নৌকার দায়িত্ব দেন তা
নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চলছে
গুঞ্জন।
বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও
ওসমানীনগর তিন উপজেলা নিয়ে
গঠিত সিলেট-২ আসন। এই আসনকে
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই অত্যন্ত
গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে
থাকে। বিগত জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে
সমঝোতায় এখানে আওয়ামীলীগ
থেকে কেউ প্রার্থী হননি। বরাবরই
এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে
একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন
প্রাপ্তির জন্য লড়াই করেন। আর
এতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরে
স্থানীয় আওয়ামীলীগ। এবারও এর
ব্যতিক্রম নয়। আগামী নির্বাচনে
এই আসন থেকে লড়তে ইতিমধ্যেই
আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থী
রয়েছেন মাঠে। সিলেট জেলা
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক
শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য
আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিন
উপজেলায় তাদের অনুসারীরা নিজ
নিজ নেতার মনোনয়ন প্রাপ্তির
ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তবে তা যে দলীয় সভানেত্রীর
সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে তা
মানছেন অনেকেই।
২৪ ঘন্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে
খ্যাত শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ
শফিক চৌধুরী । তার অনুসারী
নেতা কর্মীরা মনে করেন ক্লীন
ইমেজের ত্যাগী এই নেতার
মনোনয়ন না পাওয়ার কোন কারণ
নেই।
শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক হিসেবে দলের জন্য
নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে
যাচ্ছেন। সিলেট-২ আসনে
বিএনপির প্রভাবশালী নেতা
ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে
সাংসদ হওয়া সাবেক সাংসদ
হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। ‘২৪
ঘন্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে
পরিচিত শফিক চৌধুরীর
জনপ্রিয়তা, দলে অবস্থান এসব
নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। দলের
প্রয়োজনে প্রতিটি
স্থানীয় নির্বাচনে রাত-দিন
পরিশ্রম করে দলের জন্য কাজ করে
গেছেন।
গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী
লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার
প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সিলেট-২
আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা থেকে
নিজেকে সরিয়ে রাখেন শফিক
চৌধুরী। ওয়ান-ইলেভেনে কারারুদ্ধ
হওয়া এই নেতার দলের জন্য
ত্যাগের কারণেই আছেন তুমুল
আলোচনায়।
আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী
যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ন
সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান
চৌধুরী। বহির্বিশ্বের
বাংলাদেশী রাজনীতিতে খুবই
পরিশ্রমী নেতা। নির্বাচন করার
তাড়না থেকেই গত বেশ কিছুদিন
ধরে তিনি নিয়মিত এলাকার
আসছেন। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন
মূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত
করছেন। এলাকায় তরুন
নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ
ইতিমধ্যেই তার বলয়ে যোগ
দিয়েছে। তিন উপজেলায় নিজস্ব
বলয় ঠিক করতে প্রতিনিয়ত
যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এছাড়া ব্রিটেনে অবস্থানরত শেখ
রেহানার স্নেহধন্য হিসেবে তিনি
রয়েছেন পুরো আলোচনায়।একজন
ভালো ও পরিশ্রমী সংগঠক
হিসেবে তার দেশে ও বহির্বিশ্বে
রয়েছে সুনাম। জানা যায়, দল
আন্তপ্রাণ আনোয়ারুজ্জামান
চৌধুরী সর্বশেষ দলীয় সম্মেলনে
দলের কোন পদ পাওয়ার ব্যাপারে
তদবির লবিং করেননি। উদ্দেশ্য
সংসদ নির্বাচনে দলের টিকেট
চাওয়া।
এ বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক
আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু
সুরমানিউজকে বলেন, দলের একজন
ত্যাগী নেতা হিসেবে সিলেট
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর
রহমান চৌধুরীর জুড়ি নেই। তিনি
নিজ এলাকা, দল ও কর্মী
সমর্থকদের নিয়ে অবিরাম রাতদিন
কাজ করে চলেছেন। তাই তৃণমূল
থেকে শুরু করে এলাকার সবার প্রিয়
এই নেতার হাতেই আমাদের দলীয়
সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা নৌকা প্রতীক তুলে
দিবেন।
ওসমানীনগর উপজেলা
আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ
সম্পাদক আব্দাল মিয়া
সুরমানিউজকে বলেন, বালাগঞ্জ-
ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথবাসীর
আগামী দিনের প্রতিনিধি
হিসেবে জাতীয় সংসদে
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে
আওয়ামীলীগের নৌকার
কান্ডারী করা হবে বলে আমরা
আশাবাদী। তবে তা সম্পুর্ণ দলীয়
প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর
করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি
বলেন, দলীয় সভানেত্রী যার
হাতেই নৌকার দায়িত্ব তুলে
দিবেন আমরা তাঁর হয়ে দলের জন্য
কাজ করে যাব।
যুক্তরাজ্য যুবলীগের সভাপতি ফখরুল
ইসলাম মধু সুরমানিউজকে বলেন,
বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ ও
ওসমানীনগরে আনোয়ারুজ্জামানের
বিকল্প নেই। একমাত্র তিনিই
পারেন এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।
ইতিমধ্যেই সবাই দেখেছে তার
পক্ষে এলাকায় গণজোয়ার। দেশে
বিদেশে তার হাজার হাজার
নেতাকর্মীর বিশ্বাস আমাদের
দলীয় নেত্রী আগামী নির্বাচনে
পরিশ্রমী এই নেতাকে মুল্যায়ন
করবেন। আর নেত্রী সবসময় তরুন
নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছেন।
সিলেট ২ আসনে আগামী
নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামানই
নৌকার কান্ডারী।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ভারপ্রাপ্ত
সম্পাদক ঝলক পাল সুরমা নিউজকে
বলেন, আমাদের আস্থা ও
বিশ্বাসের জায়গা জননেত্রী শেখ
হাসিনা। তিনি কখনো সিদ্ধান্ত
নিতে ভুল করেননা। নেত্রী ত্যাগী
ও পরিশ্রমী নেতাকেই মুল্যায়ন
করবেন আমাদের বিশ্বাস।
তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয়
সভানেত্রীর উপর। তার সিদ্ধান্তই
চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। একাধিকবার
তিনি তার সিদ্ধান্তে চমক
দেখিয়েছেন। এবারও তেমন কিছু
হবেনা তা আগাম বলা যাচ্ছেনা।
সেই চমকের অপেক্ষায় রয়েছেন
সিলেট-২ আসনের তিন উপজেলার
বাসিন্দারা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন