আল্লাহর প্রিয় বান্দাহগণের জীবনে যে সকল
অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয় তাই কারামত। হক্কানী
আউলিয়ায়ে কিরাম থেকে প্রকাশিত ‘কারামত’-এ
বিশ্বাস করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের
আকীদার অংশ। আকীদার বিখ্যাত গ্রন্থ
‘আকাইদে নাসাফী’-তে বলা হয়েছে
“ওলীগণের কারামত সত্য”। সে হিসেবে মুমিন
মাত্রই কারামতে বিশ্বাসী। আমাদের পীর ও
মুরশিদের জীবনেও বহু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত
হয়েছে। কিন্তু তিনি কখনো কারামতের পিছনে
ছুটতেন না। তাঁর কারামত প্রকাশিত হোক, এটা তিনি
চাইতেন না। তাঁর সামনে কারামতের কথা বলার
সাহসও কেউ করতেন না। তিনি সবসময় কারামতের
চেয়ে শরী‘আতের উপর ইসতিকামাতকে
বেশি গুরুত্ব দিতেন।
জীবনের ব্যাপারে হতাশ রোগীর
রোগমুক্তি, দু‘আ ও তাবিযের বদৌলতে হারানো
মানুষ ফিরে পাওয়া, ডুবন্ত লাশ ভেসে উঠা,
নিঃসন্তান দম্পত্তির সন্তান লাভসহ হযরত ফুলতলী
ছাহেব কিবলাহ (র.) থেকে প্রকাশিত নানা কারামত
দেশ-বিদেশে মানুষের মুখে মুখে আজো
আলোচিত। নিচে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু
কারামত পত্রস্থ হলো।২১
ভেসে উঠল লাশ
হযরত নিজামুদ্দীন চৌধুরী বিশকুটি ছাহেব (র.)
বর্ণনা করেছেন : হযরত ফুলতলী (র.)-এর
সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। আমরা বেশ
কয়েক বার এক সাথে লন্ডন ও আমেরিকায়
কাটিয়েছি। ফুলতলী ছাহেব যখন খুতবায়ে
ইয়াকুবিয়া লেখেন তখন আমি ও মাওলানা মাহমুদুর
রহমান বদরপুরী ছাহেব লন্ডনে তাঁর সাথে
অনেক দিন ছিলাম। তিনি ঐ খুতবা লন্ডনেই
লিখেছেন। ২০০১ সালে আমেরিকার সাগর
সৈকতে ভাদেশ্বরের আমেরিকা প্রবাসী
আনছার আহমদের দুই মেয়েসহ তিন মেয়ে
ডুবে মারা যায়। তাদের দু’জনের লাশ পাওয়া যায়নি।
এ সময় ফুলতলী ছাহেব লন্ডনে ছিলেন। আমি
আর বদরপুরী ছাহেবও এক সাথে ছিলাম। এমন
সময় মেয়েদের পিতা আনছার আহমদের পক্ষ
হতে তাদের এক আত্মীয় পেরেশান হয়ে
ফুলতলী ছাহেবের নিকট গেলেন। তিনি এ
বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করলে আমি
ফুলতলী ছাহেবের নিকট আনছার আহমদকে
আমার আত্মীয় বলে পরিচয় দিলাম। এদিকে
আলহাজ্জ আনছার আহমদের ছোট ভাই মনছুরও
একই উদ্দেশ্যে আমেরিকা থেকে লন্ডন
আসছেন। আমি ফুলতলী ছাহেবকে বিষয়টি
বললাম। তখন ফুলতলী ছাহেব কিছুক্ষণ চোখ
বন্ধ করে আবার খুললেন। তিনি খিজির (আ.)’র
উদ্দেশে একটি চিঠি লিখে আমার হাতে দিয়ে
বললেন, তাদেরকে বলে দেন, যে স্থানে
মেয়েরা ডুবেছে ঐ স্থানে ছেড়ে দেওয়ার
জন্য। অনুভব করলাম, সাগর সৈকতে এরা কিভাবে
আছে এবং কিভাবে উদ্ধার করা যায় তিনি সব কিছু
চোখ বন্ধ করেই সিদ্ধান্ত নিলেন। আমার
মাধ্যমে আনছার আহমদের আত্মীয় চিঠি নিয়ে
তাঁর ছোট ভাই মনছুরের নিকট লন্ডন
এয়ারপোর্টে দিলেন। তাবিযটি ছাড়ার একদিন পর
লাশগুলো ভেসে উঠতে আরম্ভ করে। অথচ
৭ দিন ধরে আমেরিকার মতো উন্নত
প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশের উদ্ধারকর্মীরা অনেক
চেষ্টা করেও লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। একটি
লাশ ভেসে উঠার সময় একটি বড় আকারের মাছও
ভেসে উঠল। লাশের শরীরে মাছের
দাঁতের চিহ্নও দেখতে পাওয়া গেল।
হযরত নিজামুদ্দীন চৌধুরী বিশকুটি ছাহেব কিবলাহ
(র.) তিনি বিভিন্ন মাহফিলে এ ঘটনা বর্ণনা
করেছেন।
উপরোক্ত কারামত সম্পর্কে আমেরিকা
প্রবাসী জনাব মাওলানা শরীফ উদ্দিন লিখেছেন,
এ ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালের জুলাই মাসের শেষ
দিকে। ঐ সময় আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে
গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছিলো। নিউজার্সীর
প্যাটারসন শহরের দু’বোন জুবেদা (১৬) ও
সাজেদা (১৪) এবং তাদের খালাত বোন রাহেলাকে
(১২) তাদের মামা নিউইয়র্কের ফার রকওয়ে
সমুদ্র সৈকতে বড়শী দিয়ে মাছ ধরতে নিয়ে
যান। সেখানে আকস্মিকভাবে পানিতে ডুবে তিন
বোনই মৃত্যুবরণ করে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের
মধ্যে রাহেলার লাশ কোস্ট গার্ডরা উদ্ধার
করতে সমর্থ হয়। কিন্তু ডুবুরী ও উদ্ধারকারী
দল ৫/৬ দিন পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টার পরও জুবেদা
ও সাজেদার কোনো সন্ধান লাভ করতে
পারেনি। এই সময়ে খবর আসে যে ছাহেব
কিবলাহ ও বিশকুটি ছাহেব লন্ডনে অবস্থান
করছেন। ওই মেয়েদের ছোট চাচা
টেলিফোনে ছাহেবদের সঙ্গে এই বিষয়ে
আলাপ করেন। ছাহেবগণ মেয়েদের পিতাকে
সবর করতে উপদেশ দেন। কিন্তু
মেয়েদের ছোট চাচা এক ঘণ্টার ভেতর
লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে লন্ডনের
পথে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে তাদের
সেখানকার এক আত্মীয় ছাহেবগণের নিকট
গিয়ে কোনো কিছু দেওয়ার জন্য অনুরোধ
করেন। তখন বিশকুটি ছাহেব ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহ (র.)-কে অনুরোধ করলে তিনি একখানা
ভাজ করা তাবিয তার হাতে দিয়ে বলেন যে ওই
তাবিযখানা বিসমিল্লাহ বলে যেন ঘটনার স্থানে
ভাসিয়ে দেয়া হয়। মেয়েদের ছোট চাচা
হিথ্রো বিমান বন্দরে গিয়ে তাবিযখানা গ্রহণ
করে ফিরতি ফ্লাইটে কেনেডি এয়ারপোর্টে
পৌঁছেন এরপর ছাহেব কিবলার নির্দেশ
মতো যথাস্থানে গিয়ে তা পানিতে ভাসিয়ে
দেন। পরদিন দুপুরের দিকে ঘটনার স্থান
থেকে ৫/৬ মাইল দূরে জুবেদার লাশ অক্ষত
অবস্থায় ভেসে উঠে এবং এর পরদিন সাজেদার
লাশ একই ভাবে অক্ষত অবস্থায় ভেসে উঠে।
পানিতে ডুবে মরা এই তিনটি মেয়েকে
প্যাটারসনের নিকটবর্তী টটোয়া শহরের
কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দ্রষ্টব্য : মাওলানা শরীফ উদ্দীন লিখিত
‘একজন ছাহিবে কারামত ওলী আল্লাহ’ শীর্ষক
প্রবন্ধ, যা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)
স্মারকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দু‘আর বদৌলতে দৃষ্টিশক্তি লাভ
১৪১২ হিজরী সনে হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন
চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর হস্তলিখিত
‘কাসীদাতুন নু’মান’-এর একটি নুসখা প্রকাশিত
হয়েছিল। এতে তিনি ‘পূর্বাভাষ’ শিরোনামীয়
ভূমিকায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর
বাচনিক শুনে বর্ণনা করেন, প্রায় ৫০ বছর পূর্বে
সিলেটের জকিগন্্জ থানার বিলবাড়ি নিবাসী হেকিম
মাওলানা আব্দুস সুবহান চৌধুরী ছাহেব দৃষ্টিশক্তি
হারিয়ে ফেলেন। তিনি ফুলতলী ছাহেবকে
নিজ বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে যান এবং বলেন,
“আমার ইরাদা হজ্জ ও যিয়ারত করার। আপনি দু‘আ করুন
যেন আল্লাহ তা‘আলা আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে
দেন।” ফুলতলী ছাহেব বিনয় সহকারে
বললেন, “এত বড় দু‘আর জন্য আল্লাহর
কোনো মকবূল বান্দাহকে তলব করা উচিত ছিল।”
তখন হেকিম ছাহেব বলেন, “আপনার দু‘আ
নেয়ার জন্য আমাকে ইশারা করা হয়েছে।”
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ হেকিম ছাহেবের কথায়
অভিভূত হয়ে দু‘আ করলেন। হেকিম ছাহেব
তাঁকে একখানা মুতারজাম (অনুবাদ) ‘কাসীদাতুন নু’মান’
দান করলেন। আলহামদুলিল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
সাচ্চা আশিক হেকিম ছাহেব পবিত্র হেজায
ভূমিতে পদার্পণ করলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তিনি
নয়ন ভরে মক্কা মুকাররামা, মদীনা মুনাওয়ারা ও
অন্যান্য স্থান অবলোকন করেন। দেশে
প্রত্যাবর্তনের সময় চট্টগ্রাম অথবা সিলেট
পৌঁছলে তিনি আবার অন্ধ হয়ে যান।
সূত্র : আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব
কিবলাহ ফুলতলীর
হস্তলিখিত ‘কাসীদাতুন নু’মান‘-এর পূর্বাভাষ
স্বপ্নে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) একবার
স্বপ্নে দেখেন যে, অসংখ্য শকুন মানুষকে
খাবলে খাচ্ছে। চিল যেভাবে মাছ ছিঁড়ে ছিঁড়ে
খায় ঠিক তেমনি। পরে তিনি হযরত শাহ ইয়াকূব
বদরপুরী (র.)-এর কাছে এ ভয়ঙ্কর স্বপ্নের
কথা বললেন। স্বপ্নের বিবরণ শুনে কিছু সময়
অঝোরে কাঁদলেন হযরত বদরপুরী (র.)।
উল্লেখ থাকে যে, হযরত বদরপুরী (র.)-এর
অন্তরদৃষ্টি ছিল বড়ই প্রখর। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা
করতে গিয়ে বললেন, অতি শীঘ্রই
বিশ্বব্যাপী এক বড় ধরনের সংঘর্ষ বাঁধবে।
অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। প্রচুর রক্তপাত
হবে। বিভিন্ন দেশের রাজা মন্ত্রীরা এ
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। আল্লামা ফুলতলী
ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর এ স্বপ্ন বৃথা যায়নি। সত্যিই
কিছু দিনের ভেতর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং
ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দেয়।
-মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী
ছোটদের শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (র.), পরওয়ানা
পাবলিকেশন্স, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৪
লজিং মাস্টারের সন্তান লাভ
শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী (র.) রামপুর
আলিয়া মাদরাসায় পড়ার সময় রামপুর হাইস্কুলের সহ-
প্রধান শিক্ষক নব্বী শাহ সাহেবের বাসায় লজিং
থাকতেন। জনাব নব্বী শাহ ছিলেন নিঃসন্তান। তার
কোন সন্তান হতো না। আল্লাহ তা‘আলার নিকট
তিনি সব সময় কায়মনোবাক্যে দু‘আ করতেন।
কোন বুযুর্গ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ লাভ হলেই
তার নিকট দু‘আ চাইতেন।
এদিকে নম্রতা, ভদ্রতা, আদব-কায়দা, মাদরাসায় পড়াশুনা,
সহপাঠীদের সাথে বিনয় আচরণসহ ব্যক্তিত্ব
বজায় রেখে নিজেকে আলাদা রেখে অসাধারণ
ইবাদত বন্দেগীর ফলে ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহ (র.)-এর পরিচয় গোপন থাকল না। তিনি যে
শুধু একজন তালিবে ইলিমই নন; বরং একজন পীর
ছাহেবও বটে সেটি জানাজানি হয়ে গেল। তিনি
শামসুল আরিফীন হযরত মাওলানা শাহ হাফিয আহমদ
জৌনপুরী (র.)-এর খলীফা কুতবুল ইরশাদ হযরত
মাওলানা আবূ ইউসুফ শাহ্ মোহাম্মদ ইয়াকূব (হাতেম
আলী) বুন্দাশিলী বদরপুরী ছাহেব কিবলাহ
(র.)-এর নিকট হতে খিলাফত লাভ করেছেন।
তালাবাদের মধ্যে কে বা কারা সৈয়দ নব্বী
শাহকে কথাটি বলে দিলেন। তখন তিনি ভাবলেন
ফুলতলী (র.)-এর নিকট হতে তাবিয নিলে এবং তিনি
দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কোন
সন্তান দান করতে পারেন। একদিন মাস্টার ছাহেব
তাঁকে তাঁর মনের কথা খুলে বললেন। ছাহেব
কিবলাহ আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করে একটি
তাবিয লিখে দিলেন। তাবিয ব্যবহারের পর আল্লাহ
তা‘আলার অনুগ্রহে মাস্টার সাহেব একটি ছেলে
সন্তান লাভ করেন। মাস্টার সাহেব ছেলে
সন্তান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।
সূত্র : মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান প্রণীত
জীবনীগ্রন্থ ‘হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’
বিষাক্ত বোলতার আক্রমণ হতে রক্ষা
ভারতের রামপুর আলিয়া মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল
জনাব মাওলানা মাজুল্লাহ খাঁ সাহেবের থাকার ঘরে
একটি বিষাক্ত বোলতা বাসা বেঁধেছে, যার ভয়ে
ঘরে বসবাস করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভাবতে লাগলেন কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায়। এদিকে
হযরত ফুলতলী ছাহেব (র.)-এর মকবূলিয়াতের
সংবাদ চতুর্দিকে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে
প্রতিদিন অনেক মানুষ তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা
নিয়ে তাঁর নিকট আসতে লাগলেন। মাওলানা
মাজুল্লাহ খাঁ ভাবলেন ফুলতলী ছাহেবের নিকট
বিষয়টির কথা জানালে হয়তো একটি সমাধান হতে
পারে। ভাবনাকে কার্যে রূপান্তর করার পূর্বে
একদিন ঘরে প্রবেশ করতেই এক ঝাঁক বোলতা
এসে তাঁর মাথাসহ সমস্ত শরীর এমনভাবে
কামড়ালো যে তিনি যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে
গেলেন। ঘরে মানুষ থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
এমনকি আশ-পাশের মানুষেরও অসুবিধার সৃষ্টি
হচ্ছে। কেউই ঘরের কাছাকাছি যেতে সাহস পান
না। উপায়ন্তর না দেখে ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহর নিকট গিয়ে তার মাথা দেখিয়ে বললেন,
এই দেখুন কি ধরণের বোলতা কামড় দিয়েছে।
অস্থিরভাবে হাত জোড় করে তিনি ছাহেব
কিবলাহকে বলতে লাগলেন, আপনি যদি
মেহেরবানী করে আমার ঘরে তশরীফ
নিয়ে এর একটা বিহিত ব্যবস্থা করেন। আপনাকে
নেবার জন্য আমি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসেছি।
বাসা বেশি দূরে নয়। আমি আবার গাড়ি দিয়েই
আপনাকে পাঠিয়ে দিব। নিরুপায় হয়ে ছাহেব কিবলাহ
জনাব মাজুল্লাহ খাঁ সাহেবের সাথে তাঁর বাসায়
উপস্থিত হলেন। ঘরের বাঁশের বেড়ার ছাদের
উপর হাত ঢুকিয়ে বোলতার বাসাটি বের করে
আনলেন। একটি বোলতাও বাসা থেকে উড়ল না।
পরে বোলতাসহ বাসাটি শহরের বাইরে ফেলে
দিলেন। [প্রাগুক্ত]
বরাক নদীর ভাঙ্গন রোধ
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ছোট
ছাহেবজাদা মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী
বলেন, ফুলতলী ছাহেব একবার সপরিবারে ভারত
সফরে গেলে আমিও ছাহেবের সাথে ছিলাম।
দীর্ঘদিন যাবত ভারতের বরাক নদীতে প্রখর
স্রোতের ফলে আশে-পাশের রাস্তা, বাড়িঘর
বিশেষ করে একমাত্র হাইওয়েটি নদীর
ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়।
ভাঙ্গনরোধে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কোন লাভ হয়নি।
ছাহেব কিবলাহর ভারত গমনের সংবাদ পেয়ে
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার গণ্যমান্য
লোকজন ছাহেব কিবলাহর নিকট এসে
উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তাঁর কাছে
দু‘আ চাইলেন। ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তখন
ঘটনাস্থলে গিয়ে দু‘আ করে আসলেন। এর পর
থেকে তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে দু‘আ
করেছিলেন তা আর ভাঙেনি। এখন পর্যন্ত তা
অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
সূত্র : মুহাম্মদ আজিজুল হক সম্পাদিত
“দ্বীনী খিদমতে শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিত্ব
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহমতুল্লাহ
আলাইহি”
ভেসে উঠল লাশ
জগন্নাথপুর বাজারের পার্শ্ববর্তী নলজুর
নদীর অভ্যন্তরে ঘোষগাঁওয়ের খালের ডহর
নামক স্থানে ঐ এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি
আব্দুল মজিদ (প্রাক্তন মেম্বার), প্রতাব আলী
ও নৌকার মাঝিসহ মোট চার ব্যক্তি সালিশ শেষে
বাড়ি ফেরার পথে ঐ ডহরে এসে নৌকা ডুবে
পানিতে নিমজ্জিত হন। দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার
পরেও লাশের কোনো সন্ধান না পেয়ে
ফুলতলী ছাহেব (র.)-এর নিকট থেকে তাবিয
এনে ঐ স্থানে ছাড়ার পর সাথে সাথে লাশ
ভেসে উঠল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাশ
দেখে মনে হচ্ছিল যেন এই মাত্র
মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির লাশ ভেসেছে।
* জগন্নাথপুর গ্রামের একজন হিন্দু জেলে মাছ
ধরতে গেলে প্রচ- ঝড়ে নৌকা ডুবে মারা যায়।
তার লাশ খুঁজে না পেয়ে জগন্নাথপুরের মাস্টার
রইছ আলী ছাহেবের বাসায় অবস্থানরত আল্লামা
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর নিকট থেকে
পাট পড়া এনে নদীতে ছাড়ার সাথে সাথে
রায়কান্তি পুলের নীচে লাশ ভেসে উঠল এবং
স্বজনরা তাকে খুঁজে পেল।
* ইকড়ছই মাদরাসার সহকারী মৌলভী মাওলানা মফিজ
উদ্দিন ছাহেব জানান, হাজী আছাব আলী
সাহেবের ব্রিক ফিল্ডের নিকটস্থ ডহরে
গোসলরত অবস্থায় আট বছরের একটি মেয়ে
পানিতে ডুবে মারা যায়। তখন তারা ফুলতলী
ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর নিকট থেকে তাবিয এনে
ডহরে ছাড়ার পর মেয়েটির লাশ ভেসে উঠে।
তিনি আরও জানান, সুনামগঞ্জ রোডের বর্তমান
বাসস্ট্যান্ড এর পার্শ্ববর্তী জনাব কলিম উল্লার
বাড়ি গাঙে ভেঙে নিয়ে গেলে ছাহেব
কিবলাহ্র নিকট থেকে ইট পড়া এনে নদীতে
ছাড়েন, এরপর নদীসহ পার্শ্ববর্তী সøুইস
গেইটের জায়গাগুলো পলি মাটিতে ভরাট হয়ে
যাচ্ছে।
বর্ণনাকারী : মাওলানা মোঃ ছমির উদ্দিন
অধ্যক্ষ, ইকড়ই সিনিয়র আলিম মাদ্্রাসা জগন্নাথপুর,
সুনামগঞ্জ
‘ম্যালেটারি নদী’র ভাঙ্গন রোধ
বৃটেন প্রবাসী, আলমরক মসজিদের
সেক্রেটারি মোঃ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন,
আমার বাড়ি মীর্জাশহীদপুর, ওসমানীনগর,
বালাগঞ্জ। আমাদের বাড়ি ইসহাক মিয়া চৌধুরীর বাড়ি
নামে পরিচিত। মোঃ ইসহাক মিয়া চৌধুরী আমার দাদা।
আমাদের বাড়ির পেছনে একটি নদী আছে যার
নাম ‘ম্যালেটারি নদী’। নদীতে একসময় ভাঙ্গন
শুরু হলো। আমার দাদা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ
(র.)-এর শরণাপন্ন হলেন। অনুযোগ করে
বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর আর টিকবে না।’
ছাহেব কিবলাহ (র.) তখন একখানা কাগজে কিছু
লিখে দিয়ে তা নদীতে ছেড়ে দিতে
বললেন। কথামতো তাই করা হলো। এরপর
থেকে নদী ভাঙ্গন বন্ধ হয়ে যায়। আজ
পর্যন্ত আমাদের বাড়ি-ঘর অক্ষত রয়েছে। সে
সময় আমার বাবা মোঃ আতাউর রহমান চৌধুরীও
জীবিত ছিলেন।
সংগ্রহকারী : হাফিয সাব্বির আহমদ, কভেন্ট্রি,
ইউ.কে.
তাবিযের বরকতে রোগমুক্তি
১৯৯৭-এ বদরপুরস্থ দেওরাইল সিনিয়র মাদরাসায়
অধ্যয়নকালে গড়কাপন গ্রামের মুজিবুর রহমান
সাহেবের বাড়িতে এক বৈঠকী আলোচনায়
বাঁশকান্দি মাদরাসার প্রধান মাওলানা আহমদ আলী
সাহেবকে বলতে শুনেছি, ১৯৪৬-৪৭ সালে দারুল
উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় অধ্যয়নকালে আহমদ
আলি সাহেবের এক মারাত্মক রোগ দেখা
দেয়। অনেক চেষ্টা ও তদবিরের পরও
রোগের কোনো উপশম না হওয়ায় তিনি পড়া
ছেড়ে দেওবন্দ থেকে বদরপুরে নিজ
বাড়িতে চলে আসেন। এখানে আসার পর
তৎকালীন আসাম-বাংলার শ্রেষ্ঠ ওলী আল্লামা
ফুলতলী ছাহেবের মুরশিদ হযরত শাহ ইয়াকুব
বদরপুরী (ওরফে হাতিম আলী) ছাহেব (র.)-এর
সমীপে উপস্থিত হওয়া মাত্রই তিনি বলেন,
‘আহমদ আলী, তোমার বদনজর লেগেছে।
আব্দুল লতিফ (ফুলতলী ছাহেব)-এর কাছ
থেকে একটি তাবিয গ্রহণ কর। নিরাময় হয়ে
যাবে।’ ফুলতলী ছাহেবের কাছে উপস্থিত
হলে তিনি আহমদ আলী সাহেবকে একটি তাবিয
প্রদান করেন। এই তাবিযের বরকতে আহমদ
আলী সাহেব রোগমুক্ত হন এবং তিনি পুনরায়
দেওবন্দ গিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন।
ঘটনাটি মাওলানা আহমদ আলী সাহেবের মুখে
শোনার কিছুদিন পর হোজাইয়ের মরকজুল মারিফ
প্রকাশনী থেকে বদরুদ্দীন আজমলের
বদান্যতায় প্রকাশিত আব্দুল জলিল রাগিবীর লিখিত
মাওলানা আহমদ আলী সাহেবের
জীবনীগ্রন্থ ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের
ওলীয়ে কামিল’ পুস্তকেও উল্লেখ পাই।
বর্ণনাকারী : এম. হাবিবুর রহমান লস্কর
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা, ভাগাবাজার,
কাছাড় (আসাম)।
সূত্র : মুহাম্মদ আজিজুল হক সম্পাদিত
‘দ্বীনি খেদমতে শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিত্ব
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’
আল-মনসুর পাবলিকেশন্স, করিমগঞ্জ, আসাম
(ভারত), জুলাই ২০০৮
দপ করে নিভে গেল আগুন
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তখন বয়সে
তরুণ। তখন আছিমিয়া সিনিয়র মাদরাসার পূর্ব মাঠে
একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। বর্তমানে যেখানে
একটি মসজিদ গড়ে উঠেছে, ঠিক সেই স্থানে
আয়োজিত এক মাহফিলে তিনি বয়ান ফরমাচ্ছেন।
বয়ান চলাকালীন পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে আগুন
ধরেছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে একটি বাড়ি।
আগুনের তীব্রতা দেখে মানুষ মাহফিল
ছেড়ে ওই বাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করেন।
তখন ছাহেব কিবলাহ বয়ান থামিয়ে বললেন,
আপনারা মাহফিল ভাঙ্গবেন না, বসে পড়–ন।
ইনশাল্লাহ, আগুন এখনই থেমে যাবে। এই বলে
টেবিলের উপর সজোরে থাপ্পড় মারলেন।
সত্যিই, আল্লাহর কী দয়া। সঙ্গে সঙ্গে
শোনা গেল, আগুন থেমে যাচ্ছে। সবাই
মাহফিলে চুপচাপ বসে রইলেন। ছাহেব কিবলাহ
যথারীতি বয়ান করে গেলেন।
যুবক ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর সেদিনের
কারামত যারা প্রত্যক্ষ করেছেন, তন্মধ্যে
একজন হলেন ৬৭ বছর বয়সী রাতাবাড়ির হাফিয
জহির উদ্দিন ছাহেব। তিনি এই ঘটনা বর্ণনা করেন।
[সূত্র : প্রাগুক্ত]
বিষক্রিয়া উপশম হলো
মাওলানা আলিমুদ্দীন (ভাগাবাজার, কাছাড়, আসাম, ভারত)
বলেন, ভাগাবাজারের (করিমগঞ্জ, আসাম)
খলিলুদ্দীন লস্কর নামক এক ছাত্রের এইচ এস সি
পরীক্ষার্থীর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা খুবই
খারাপ হয়। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে আসার পর
মনের দুঃখে সে বিষ পান করে ফেলে।
বিষের প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তাকে সাথে সাথে
নিয়ে যাওয়া হলো ভাগাবাজারস্থ হাজী তাবারক
লস্করের বাড়িতে অবস্থানরত আল্লামা ফুলতলী
ছাহেবের কাছে। ফুলতলী ছাহেব পানিতে ফুঁক
দিয়ে তাকে তা পান করান এবং দুহাত তুলে আল্লাহর
দরবারে মুনাজাত করে তার জীবন ভিক্ষা চান।
সাথে সাথে তার বিষক্রিয়া উপশম হয়। বিনা চিকিৎসায়
বেচারা সুস্থ হয়ে ওঠে। তিনি আজও সুস্থ
আছেন। [সূত্র : প্রাগুক্ত]
তাবিযের ভেতর পুত্রসন্তানের নাম
কাছাড় ভাগাবাজারের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি
ছিলেন হাফিয আব্দুল জলিল। হাফিয শফিকুর রহমান
নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর এক মেয়ের
বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় দশ-বার বছর পর্যন্ত এ
দম্পতির কোনো জীবিত সন্তানাদি ছিল না। হাফিয
আব্দুল জলিল তাঁর মেয়ের বিবাহিত জীবনের এ
সমস্যার কথা জানিয়ে ছাহেবের কাছে একটি
তাবিযের জন্য আবদার করেন। ফুলতলী ছাহেব
তাঁকে একটি তাবিয দিলেন এবং সেই সঙ্গে
বললেন, এ তাবিযের ভিতরে একটি নাম আছে,
সন্তান জন্ম হওয়ার পরে শিশুটির যেন এ নাম রাখা
হয়। যথাসময়ে উক্ত মহিলার গর্ভে এক ফুটফুটে
পুত্রসন্তানের জন্ম হলো। সঙ্গে সঙ্গে
শিশুটির বাবা ফুলতলী ছাহেব প্রদত্ত সেই তাবিযটি
স্বীয় শ্বশুর হাফিয আব্দুল জলিলের হাতে
তুলে দিলেন। কী আশ্চর্য! হাফিয সাহেব কবয
থেকে তাবিযটি খুলে দেখলেন যে, তাতে
লেখা রয়েছে ‘মুহাম্মদ‘। পূর্ব নির্দেশমত এই
শিশুটির নাম রাখা হলো মুহাম্মদ আহমদ
হোসেন। ঘটনাটির সত্যাসত্য যাচাই করার জন্য
হাফিয শফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁর
আনুপূর্বিক বর্ণনা দেন। [সূত্র : প্রাগুক্ত]
সুস্থ হলো কুকুরে কামড়ানো ছেলে
তখন সবে মাত্র দেশ স্বধীন হয়েছে। আমি
আমার দোকানে কাজ করছিলাম। আমার বড়
ছেলে নজরুল ইসলাম-এর বয়স তখন ৫-৬ বছর
হবে। সে কুকুর নিয়ে খেলছিল। হঠাৎ কুকুরটি
এসে তার মাথায় কামড় মারলো। সেদিন ছিল
মঙ্গলবার, মাস ছিল ভাদ্র; কুকুরটি ছিল পাগল।
এমতাবস্থায় বিষয়টি কুলক্ষণে মনে হলো।
ছেলেকে নিয়ে কি করি চিন্তায় পড়ে গেলাম।
ছাহেব কিবলাহ (র.) তখন সিলেট জেলা কারাগারে।
তাঁকে ঘটনাটি বলা সমীচীন মনে করলাম না।
যে যা বললো আমি তাই করতে লাগলাম। কিন্তু
কোনো ফল পেলাম না। প্রতিষেধক
ইনজেকশন মৌলভীবাজার, সিলেট খুঁজতে
খুঁজতে কোথাও পেলাম না। একটা ইনজেকশন
পেলাম, একজন রোগীর, তাও অনেক
কষ্টের বিনিময়ে। ইনজেকশন দেবার পর কিছুটা
সান্ত¡না পেলাম। ডাক্তার বললেন, আগামী দুই
বৎসর এ রোগী কোন গোশত খেতে
পারবে না। আমরা ছেলেকে গোশত না
খাইয়ে রাখছিলাম। এ ঘটনার পরের মাস ছিল রামাদান
শরীফের মাস। প্রতিদিন সেহরী খাবার পর
আমরা ঘুমিয়ে পড়তাম। ইতোমধ্যে আমার এ
ছেলে অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সাথে
মক্তবে যেত। একদিন ঘুম থেকে উঠে আমার
বিবি (স্ত্রী) দেখেন গোশতের পাতিলের
ডাকনা উঠানো। তিনি আমাকে ঘুম থেকে
ডেকে তুললেন এবং দেখালেন যে ছেলে
গোশত খেয়ে ফেলেছে। আমি চিন্তায়
পড়ে গেলাম। ডাক্তার বলেছিল দুই বছর
গোশত না খাওয়াতে, এখন কি করি? ঘটনার ৩-৪ দিন
পর আমি ফেঞ্চুগঞ্জে গিয়েছিলাম ব্যবসার
কাজে। রাতে বাড়ি এসে শুনি কান্নার আওয়াজ,
বললাম কি হয়েছে? আমার বিবি বললেন ছেলে
পাগলামী শুরু করেছে। পানি দেখলে ভয় পায়,
আগুন দেখলে ভয় পায়। এ অবস্থা শুনে ও
দেখে আমারও কান্না আসল। এখন কি করব কিছু
বুঝতে পারলাম না। পাশের বাড়ির লোকজনের
সাথে পরামর্শ করলাম। তখনকার সময়ে এই এলাকায়
ডাক্তার ছিলো না। হঠাৎ মনে হলো বাগানে
একজন ডাক্তার আছেন তার কাছে নিয়ে যাই। তিনি
ছেলেকে দেখে জিহ্বায় কামড় মারলেন।
ডাক্তারের এ অবস্থা দেখে আমার আর বুঝতে
বাকী রইল না। ভাবলাম ছেলেকে বুঝি হারাতে
হবে। ডাক্তার কিছু ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিলেন।
বাসায় ফিরে এসে কি করা যায় তা নিয়ে সবার সাথে
আলোচনা করলাম। মনে হলো ছাহেব কিবলাহর
কাছে গিয়ে বললে তিনি হয়তো কিছু দিবেন।
তাই আর দেরি না করে সকালে উঠেই
সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। ছাহেব
কিবলাহ তখন জেলে। গিয়ে দেখি জেলের
সামনে লাইনে দাঁড়ানো অনেক মানুষ। কেউ
ছাহেব কিবলাহকে দেখতে এসেছেন, কেউ
কিছু নিয়ে এসেছেন, আবার কেউ বিপদে পড়ে
এসেছেন। সবার সাথে আমিও লাইনে দাঁড়াই।
আমার সামনে যখন ৪-৫ জন মানুষ তখন ছাহেব
কিবলাহ আমাকে ইশারা করলেন লাইন থেকে
সরে দাঁড়ানোর জন্যে। আরও ২-৩ জনকেও
এভাবে বললেন। সবার সাক্ষাৎ শেষ হওয়ার পর
পুলিশ এসে আমাকে বলল ছাহেব কিবলাহ
আপনাকে ডাকছেন। আমি গিয়ে ছাহেব কিবলাহর
সামনে দাঁড়ানো মাত্রই তিনি বললেনÑকি
হয়েছে দরছ মিয়া? আমি ছাহেব কিবলাহকে
সমস্ত ঘটনা খুলে বলি। ঘটনা শুনে ছাহেব কিবলাহ
বললেন, আগে আসলে না কেন? আমি বললাম,
আপনার এ অবস্থার মধ্যে আপনার কাছে আসা
সমীচীন মনে করিনি। ছাহেব কিবলাহ তখন
সৈয়দ সাহেবকে ডাক দিয়ে, কুরআন শরীফের
একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন,
মনে আছে কি? সৈয়দ সাহেব বললেন জি,
ছাহেব আমার মনে আছে। ছাহেব কিবলাহ
বললেন, আপনি দরছ মিয়ার সাথে তার বাড়িতে
যাবেন, বাড়িতে গিয়ে একটি মোরগ জবাই করে
রান্না করার পর তরকারীতে ফুঁক দিয়ে আপনি,
দরছ মিয়া এবং তার ছেলেকে নিয়ে একসাথে
বসে খাবেন। এ কথা বলার পর ছাহেব কিবলাহ
বললেন, গাড়ির সময় হয়ে গেছে আপনারা এখন
রওয়ানা দিন। আমরা মেইল ট্রেনে সিলেট
থেকে কুলাউড়ায় এসে ফুলতলায় আসি। বাড়ি এসে
পৌঁছালে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
আমাকে দেখে আমার বিবি কান্না জড়িত কন্ঠে
বলেন, ছাহেব কিবলাহ কি দিয়েছেন? কি নিয়ে
এসেছেন তাড়াতাড়ি দিন। সান্ত¡না দিয়ে বললাম
আমাদের একটু সময় দাও এবং আমাদের জন্য
খাবারের ব্যবস্থা কর। আর একটা মোরগ নিয়ে
আস যবাই করার জন্য। মোরগের কথা শুনতেই
বললেন, মোরগ দিয়ে কি হবে? আমি বললাম,
খাব। নিজ হাতে যবাই করলাম। রান্না শেষে আমার
ছেলে ও সৈয়দ সাহেবকে নিয়ে এক সাথে
খেতে বসলাম। সৈয়দ সাহেব ঐ আয়াত পড়ে
তরকারীতে ফুঁক দিলেন। তারপর আমরা তিনজন
বসে ভাত খেলাম। এ অবস্থা দেখে আমার বিবি
বললেন, গোশত খেয়ে আমার ছেলে পাগল
হয়েছে আবার তাকে গোশত দিচ্ছেন। সৈয়দ
সাহেব বললেন, বাবা তুমি বেশি বেশি করে
গোশত খাও তোমার কোনো রোগ নেই।
ভাত খাওয়া শেষ হলে আমার ছেলে লম্বা ঘুম
দিয়ে পরদিন দুপুর ১২টায় উঠে। তখন থেকে তার
আর কোনো সমস্যা হয়নি।
বর্ণনাকারী : হাজী দরস মিয়া
ফুলতলা, জুড়ি, মৌলভীবাজার
সংগ্রহকারী : ফজলুল হক খান সাহেদ ও বদরুল
ইসলাম
কুলাউড়া, মৌলভীবাজার
তথ্যসূত্র :
১. আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) প্রদত্ত
হাদীসের সনদ।
২. আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.), আল
কাউলুছ ছাদীদ।
৩. শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (র.), মুহাম্মদ
হুছামুদ্দীন চৌধুরী, পৃষ্ঠা ৭১।
৪. আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) প্রদত্ত
তরীকদের সনদ।
৫. নির্দেশিকা, দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট,
প্রধানকেন্দ্র ফুলতলী ছাহেব বাড়ি।
৬. বিশেষ ক্রোড়পত্র, দারুল কিরাত মজিদিয়া
ফুলতলী ট্রাস্ট : দৈনিক ইনকিলাব ৩১ মার্চ, ২০০২,
১৬ মুহররম ১৪২৩।
৭. মদীনার রাহগীর, পৃষ্ঠা ৬
৮. আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) প্রদত্ত
দালাইলুল খায়রাতের সনদ।
৯. নালায়ে কলন্দর, আল্লামা ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহ, কাব্যানুবাদ: সৈয়দ শামসুল হুদা, পৃষ্ঠা ২৩
১০. নালায়ে কলন্দর, আল্লামা ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহ, কাব্যানুবাদ: মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান,
পৃষ্ঠা ২৭
১১. ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ড সম্পর্কে
কিছু কথা, হাফিয মাওলানা ফখরুদ্দীন চৌধুরী
ফুলতলী, গুলশানে লতিফী, পৃষ্ঠা ৫
১২. যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর
তথ্য নেয়া হয়েছে দারুল হাদীস লতিফিয়ার
প্রিন্সিপাল জনাব মাওলানা মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী ও
শাহজালাল মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টারের ইমাম
ও খতীব মাওলানা খায়রুল হুদা খান থেকে।
১৩. নির্দেশিকা, দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী
ট্রাস্ট, প্রধানকেন্দ্র ফুলতলী ছাহেব বাড়ি।
১৪. হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ’র
নিকট থেকে হাদিস শরীফের সনদ
গ্রহণকারী শাগরিদবৃন্দ কর্তৃক প্রকাশিত ‘রাহী
মদীনা’।
১৫. দালাইলুল খায়রাত এর সনদ বিতরণ উপলক্ষ্যে
প্রকাশিত মদীনার রাহ্গীর, পৃষ্ঠা ৫।
১৬. ইবতেহাল; বাদেদেওরাইল ফুলতলী আলিয়া
মাদরাসা, কামিল ২০০২ ঈসায়ী সনের বিদায়ী
ছাত্রগণ।
১৭. ‘গুণীজনের মূল্যায়ন’-এর অধিকাংশই আল্লামা
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) স্মারক থেকে
নেয়া। (দ্রষ্টব্য : পৃষ্ঠা ৬৭৩-৬৮৬)
১৮. বক্তব্যটি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ
(র.) স্মারক-এ গ্রন্থিত অ ঝঢ়রৎরঃঁধষ গধংঃবৎ এর
অনুবাদ। (দ্রষ্টব্য : পৃষ্ঠা ৫০-৫১)
১৯. বক্তব্যটি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ
(র.) স্মারক থেকে নেয়া। (দ্রষ্টব্য : পৃষ্ঠা
৫৬-৫৭)
২০. বক্তব্যটি আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ
(র.) স্মারক থেকে নেয়া। (দ্রষ্টব্য : পৃষ্ঠা
৭২-৭৩)
২১. কারামতগুলো আল্লামা ফুলতলী ছাহেব
কিবলাহ (র.) স্মারক থেকে নেয়া। (দ্রষ্টব্য :
পৃষ্ঠা ৬৪১-৬৭০)
দৈনিক তাক্কওয়া–
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন