রবিবার, জানুয়ারী ২৯, ২০১৭

সুরমার তীর দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা


সিলেটের নগরীর উপর দিয়ে বয়ে চলা
সুরমা নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে
গড়ে উঠেছে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নগরীর পূর্ব কাজিরবাজারের 'কলার
আড়তের ঘাট' থেকে কাজিরবাজার সেতু
পর্যন্ত নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে
উঠেছে এসব দোকানঘর। অধিকাংশ
দোকানঘর নিচের দিকে বাঁশের খুঁটি
দিয়ে গড়ে উঠলেও অনেকগুলো আবার
পাকা ভবন।
এভাবে স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদীর
স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে
বলে জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। অথচ
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা
না নিয়ে উল্টো সহযোগিতা করেছে বলে
অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন দোকান মালিকের সঙ্গে কথা
বলে জানা গেছে, ব্যক্তি উদ্যোগে
তাদের কেউ বাঁশ-টিন দিয়ে এবং অন্যরা
একেবারে পাকা ঘর বানিয়ে নিয়েছেন।
নগরীর কিস্ফনব্রিজ থেকে
কাজিরবাজার পর্যন্ত গড়ে ওঠা বিভিন্ন
অবৈধ স্থাপনা আলোচিত ওয়ান-
ইলেভেনের সময় অপসারণ করে নদীর তীর
সংস্কার করে সৌন্দর্যবর্ধন করা
হয়েছিল। সাম্প্রতিক ওই অংশটুকু বাদ
দিয়ে 'কলার আড়তের ঘাট' থেকে অবৈধ
স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছে।
তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা
স্বীকার করেছেন, কারও অনুমতি ছাড়াই
ব্যক্তিগত উদ্যোগে তারা স্থাপনাগুলো
গড়ে তুলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, নগরীতে
ব্যবসা করতে হলে সিলেট সিটি
করপোরেশন (সিসিক) থেকে ব্যবসার
অনুমতিপত্র (ট্রেড লাইসেন্স) নেওয়া
বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে যাচাই-
বাছাইয়ের কথা থাকলেও তা না করে
এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসার অনুমতিপত্র
দিয়েছে সিসিক কর্তৃপক্ষ। একই সারিতে
নির্মিত একটি পাকা শৌচাগার
সম্প্রতি উচ্ছেদ করলেও রহস্যজনক কারণে
এসব অবৈধ স্থাপনার ব্যাপারে নিশ্চুপ
সংশ্লিষ্টরা।
সিসিকের লাইসেন্স অফিসার হেলাল
উদ্দিন বলেন, সুরমা নদীর ঢালে গড়ে ওঠা
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেরই ট্রেড
লাইসেন্স আছে। এক প্রশ্নের জবাবে
তিনি বলেন, লাইসেন্স শাখার
কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পেলে
ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এ
ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা বৈধ না
অবৈধ তা যাচাই-বাছাই করা হয় না বলে
স্বীকার করেন তিনি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)
নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম
বলেন, নদীর তীর বা ঢালে কোনো
স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ নেই।
বিষয়টি দেখার জন্য জাতীয় নদী কমিশন
গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি সিলেটে
বিভাগীয় পর্যায়ে কমিশনের বৈঠক
অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুরমা নদীসহ অন্যান্য
নদীর সীমানা চিহ্নিত করার উদ্যোগ
নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় অবৈধ দখল
হলেই শুধু পাউবো তা উচ্ছেদের ব্যাপারে
পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি একই
স্থানে নির্মিত শৌচাগার উচ্ছেদের
সময় তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন
নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল
আবেদিন বলেন, এ ব্যাপারে কেউ
অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির
(বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ
সাহেদা আখতার জানান, সিলেটের নদ-
নদী দখল-দূষণ রুখতে আইনি পদক্ষেপ
নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। নগরীর
কাজিরবাজার এলাকায় সুরমার ঢাল দখল
করে স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারেও
তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুতের পরিকল্পনা
রয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন অঙ্গীকার
বাংলাদেশের সিলেট শাখার পরিচালক
মইনুদ্দিন জালাল নদী-জলাশয় রক্ষায়
শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব মানুষের সম্মিলিত
প্রয়াসের আহ্বান জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন