লংলা গাঁইয়া বেটি গো উঁচাত বান্ধো খোঁপা, হাইর গলাত ছিয়া ফালাইয়া দেশো রাখছো খোঁটা’ সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত একটি প্রবাদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার লংলার এক নারীকে উদ্দেশ্য করে রচিত। প্রবাদটি বলছে, লংলার ওই নারী তার স্বামীকে হত্যা করে সারা দেশে লংলার নারীদের জন্য কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। যাকে উদ্দেশ্য করে এই প্রবাদের জন্য তার নাম করিমুননেসা।
করিমুননেসা। লংলা পরগণার কানাইটিকরের নজম্বর আলী চৌধুরীর মেয়ে। রূপে গুণে অনন্যা। জমিদারকন্যা হলেও আভিজাত্যের প্রতি কোনো মোহ ছিলো না তার। বরং প্রজাদের প্রতি জমিদারদের অত্যাচারের গল্প শুনে তার মন কেঁদে উঠতো। ধনী-দরিদ্রের ভেদ ছিলো না তার মনে। সবাইকেই সমান চোখে দেখতেন, ভালোবাসতেন। ভালোবাসার কাঙাল-এ করিমুননেসাই- পুরো সিলেটে যেনো এক ঘৃণিত চরিত্র। হৃদয়ের ভালোবাসাই তাকে ঘৃণার পাত্রীতে পরিণত করেছে।
করিমুননেসা প্রাণচঞ্চল এক কিশোরী। মন দিয়ে বসেছিলেন বাবার সেরেস্তাদারকে (হিসাবরক্ষক)। অবসর সময়ে ওই সেরেস্তাদার পড়া দেখিয়ে দিতেন করিমুননেসাকে। পাঠের ফাঁকে ফাঁকে মনের অজান্তেই মন বিনিময় হয়ে যায় দু’জনের। দু’জনের মনের ঘরে ভালোবাসা বাসা বাঁধলেও কেউই কাউকে মুখ ফোটে কিছু বলেননি সাহসের অভাবে। এরই মাঝে বিয়ে ঠিক হয় করিমুননেসার। পাত্র ইটার জমিদার দেওয়ান মো. মনসুর ওরফে কটু মিয়া। বাবা দেওয়ান মো. সাকির মৃত্যুর পর তিনি একাই সামলাচ্ছেন ইটার বিশাল জমিদারি।
বিয়ের খবরে কান্নার ঢেউ ভাঙে করিমুননেসার চোখে। বুকে যেনো হাতুড়ির ঘা পড়তে থাকে। ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে যেতে মন মানছিলো না কিছুতেই। কিন্তু উপায় নেই বাবার কথা উল্টানোর। কাউকে বললেও কিছু হবে না। বুকের ব্যথা বুকে রেখেই মেনে নেন নিজের নিয়তি। বিয়ের পর বাবার বাড়ি ছেড়ে করিমুননেসার ঠিকানা হয় ইটায়। একা সংসারে ভালো লাগে না করিমুন নেসার। স্বামীরও সময় নেই সময় দেওয়ার। স্বামী তার ব্যস্ত জমিদারি নিয়ে। ভোগ-বিলাসেও কিছুটা সময় কাটে কটু মিয়ার। স্বামীর সংসারে ভালোবাসার দেখা পেলে হয়তো প্রথম প্রেম ভুলেও যেতেন করিমুননেসা। একাকিত্ব তার প্রেমকে আরো জাগিয়ে তুলে। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে করিমুননেসার দেখা হয় তার গৃহশিক্ষকের সাথে। বুকে চাপা রাখা ভালোবাসা ফোলে উঠে জোয়ারের মতো। করিমুননেসা সিদ্ধান্ত নেন আর ফিরে যাবেন না ইটায়। এরই মাঝে কটু মিয়া বেড়াতে আসেন লংলায়। শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় কটু মিয়ার। সন্দেহের তীর ধেয়ে যায় করিমুননেসার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন