স্টাফ রির্পোটার : শুক্রবার রাতে নগরীর
সোবহানিঘাট উপশহর এলাকা পুলিশ ও পরিবহন
শ্রমিকদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিনত
হয়। এসময় সড়কের উভয় দিকে শতশত
যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ আটকা পড়লে এক
অবর্ণননীয় দুর্ভোগ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরফিরতি মানুষজন ও
শহরমুখি যাত্রী সাধারণকে পায়ে হেঁটে
গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
শুক্রবার হওয়ার কারণে এসময় নগরী এবং
আশপাশে বেড়াতে আসা বিপুল সংখ্যক
লোকজন রাস্তায় আটকা পড়েন। মহিলা ও
শিশুদের মাঝে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি
হয়। বেশিরভাগ লোকজনকে গাড়ি থেকে
নেমে হেঁটে ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ
করতে দেখা যায়। এসময় উপশহর
পয়েন্টে পুলিশের অবস্থান কালে এক
সদস্যের হাতে থাকা শটগান থেকে
অসচেতভাবে একটি গুলি বেরিয়ে যায় বলে
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এতে এলাকায়
আরো ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে সোবহানীঘাট
উপশহর মেইনরোডে দুই পিকআপ
শ্রমিককে আটকের ঘটনার জের ধরে
এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এসময় সংঘর্ষে
৭/৮জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষের সময় বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়
বলে প্রতক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই
আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ।
প্রতিবাদে ট্রাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ
করে এবং পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লোগান
দিতে থাকে। এসময় পুলিশ উপশহর
পয়েন্টে শাহজালাল ব্রীজ মাইক্রোবাস
শ্রমিক উপ কমিটি নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের
অফিসে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেন
শ্রমিক নেতারা। ঘটনার কিছুক্ষন পর সিলেট
মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি বদরউদ্দিন
আহমদ কামরান এবং সিলেট মেট্রোপলিটন
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম
রোকনউদ্দীন ঘটনাস্থলে পৌছান। তারা
শ্রমিক নেতাদের সাথে আলাপ করেন এবং
বিষয়টি সুরাহা করবার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের
আশ্বাসে শ্রমিকরা কিছুটা শান্ত হয়। তবে তারা
চলে যাবার কিছু সময় পর পরিবেশ ধীরে
ধীরে আবার উত্তেজিত হতে থাকে।
এসময় শ্রমিকরা আটক শ্রমিকদের মুক্তির
দাবিতে রাস্তায় নেমে পড়ে এবং
সোবহানিঘাট এলাকায় রাস্তার উপর আড়াআড়ি
ট্রাক রেখে রাস্তা অবরোধ করে রাখে।
পরে শ্রমিক নেতারা নিজেদের মধ্যে
বৈঠকে বসেন। মধ্যরাতে এ প্রতিবেদন
লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতির কোন সমাধান হয়নি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের দাবি, শুক্রবার
রাতে মহাজনপট্টি থেকে মাদকসহ দুই ট্রাক
শ্রমিককে ডিবি পুলিশ আটক করে। পরে
১০/১২ জন শ্রমিক মিলে তাদের ছাড়িয়ে
নিতে উপশহরে ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে হামলা
চালায়। তবে শ্রমিকরা জানিয়েছেন মাদকের
দাবি অসত্য। মূলত অনৈতিকভাবে চাঁদা আদায়
করতে তাদের গাড়ি আটকায় পুলিশ। চাঁদা না
পেয়ে শ্রমিকদের মারধর করে এবং দুই
শ্রমিককে আটক করে নিয়ে যায়। দুজনকে
আটকের বিষয়টি জানতে তারা ডিবি পুলিশ
কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের কাছে ঘুষ চাওয়া
হয় এবং মারধর করা হয়। পরে উপশহর শাহজালাল
সেতু সংলগ্ন এলাকায় এসেও ট্রাক ও
মাইক্রোবাস শ্রমিকদের মারধর করে
গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় কয়েকটি গাড়িও
ভাংচুর করে তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের
পর সোবহানীঘাট থেকে শাহজালাল সেতু
পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে
শ্রমিকরা। এসময় ব্যস্ত এই সড়ক দীর্ঘ
যানজটের কবলে পড়ে। পরে রাত ১০টার
দিকে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের
আশ্বাসে ট্রাক শ্রমিকদের একটি পক্ষ
অবরোধ তুলে নেয়। তবে আরেক পক্ষ
আটককৃত শ্রমিকদের মুক্তি না দিলে
অবরোধ চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এদিকে, সংঘর্ষ এবং অবরোধের কারণে
আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি
হয়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার
রোকন উদ্দিন ঘটনাস্থল থেকে বলেন,
দুজনকে আটকের জেরে ট্রাক শ্রমিকরা
ডিবি পুলিশের অফিসে হামলা করেছিলো। এ
নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখন
পরিস্থিতি শান্ত আছে। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন
সিলেটের সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন,
প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাসে
আমরা ১০টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার
করেছি। এসময় তিনি উপশহর পয়েন্টে
শাহজালাল ব্রীজ মাইক্রোবাস শ্রমিক উপ
কমিটির অফিসে শ্রমিকনেতাদের নিয়ে বৈঠক
করছিলেন। এদিকে অবরোধস্থলে
উপস্থিত ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেটের
সাবেক সভাপতি আবু সরকার জানান, ঘটনা
সম্পর্কে এখনি পুরোপুরি কিছু বলা যাবে না।
নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেছেন, সেখান
থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর বিস্তারিত বলা
যাবে। পুলিশ আমাদের দুজন শ্রমিককে
আটক করেছে। তারপর ঘুষ দাবি করেছে।
তাদের মুক্তি না দিলে শ্রমিকরা অবরোধ
প্রত্যাহার করবে না।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পুলিশের একাধিক
কর্মকর্তার সাথে মোবাইলে
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের
পাওয়া যায়নি। কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক
বিস্তারিত মন্তব্য বা তথ্য দিতে রাজি হননি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন