মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬

বই উৎসব নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের বিরোধ

আগামী ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে
মহানগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিশুদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে উদ্যাপন করা
হবে পাঠ্যপুস্তক উৎসব ২০১৭। অন্যদিকে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একই দিন
রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল
অ্যান্ড কলেজ মাঠে উদ্যাপন করা হবে
পাঠ্যবই উৎসব।
জাতীয় এ উৎসব নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের
পৃথক আয়োজনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন
পরস্পরবিরোধী অবস্থান নতুন কিছু নয়।
সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা ৮ম
শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ।
কার্যকর বাস্তবায়ন নেই গত ৬ বছরেও।
বরং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কর্তৃত্ব-
প্রাপ্তির রশি টানাটানিতে মৌন
দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা
মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়। এ দ্বন্দ্বের রেশ দৃশ্যমান
হয়েছে প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম
শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য
দিয়ে। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পাঠ্যবই
উৎসব আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিষয়টি
আরও স্পষ্ট হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উৎসব
আয়োজনে ব্যয় নির্বাহে আকাশচুম্বী
বাজেট নিয়েও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মন্ত্রণালয়ের
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল
মুহিতের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী
মোস্তাফিজুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের
সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের
মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের
উপস্থিতিতে শিশুদের হাতে তুলে
দেওয়া হবে নতুন পাঠ্যবই। অন্যদিকে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবই উৎসবে
থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম
নাহিদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং
এনসিটিবির চেয়ারম্যান উৎসবের
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে জানা
গেছে।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের উৎসবের জন্য ৩০ লাখেরও
বেশি টাকা ব্যয় দেখানোতে প্রশ্নবিদ্ধ
হয়েছেন কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিয়ে
তাদের মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
একপক্ষ ইতোমধ্যেই অভিযোগ তুলেছেÑ
পাঠ্যবই উৎসবের নামে সরকারের অর্থের
লোপাট হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের একাধিক
কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন,
আমরা বই বিতরণ করব প্রাথমিক স্তরের
শিক্ষার্থীদের মাঝে। কিন্তু উৎসবের
আয়োজন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়
মাঠে। যা কখনই করা হয়নি। এটা সরকারি
অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের পাঠ্যবই উৎসব
খাতে মোট ৩০ লাখ তিন হাজার ৫০০
টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মঞ্চ
ও মাঠ সজ্জায় এক লাখ ৫ হাজার টাকা,
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য এক লাখ ৫০
হাজার ৭৫০ টাকা, আমন্ত্রণপত্র ছাপানো
ও বিতরণের জন্য ৫৫ হাজার টাকা,
আপ্যায়ন ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি
ব্যয় ৯ লাখ ৪ হাজার ১০০ টাকা,
সেলিব্রেটি উপস্থিতি ও সম্মানী দুই
লাখ টাকা, ডকুমেন্টারি তৈরিতে চার
লাখ ৪৯ হাজার ৬৫০ টাকা, মিডিয়া
প্রচার ও অন্যান্য তথ্য যোগাযোগ খাতে
দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা
হয়েছে। বই উৎসবের জন্য এত টাকা ব্যয়
নির্ধারণের কারণ সম্পর্কে জানতে
চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বিষয়ে কোনো কথা
বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব
গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জানান, আসলে
একটি বড় অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন, মাঠ
সাজানো ও এ সংক্রান্ত কাজে এ ব্যয়
নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
অনুষ্ঠানের জন্য সাত লাখ টাকার
সংস্থান করা হয়েছে এনসিটিবি,
শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা অধিদফতর
থেকে।
দুই মন্ত্রণালয়ের আলাদা অয়োজন এ
উৎসবের আনন্দে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে
মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১০ সাল
থেকে দুই মন্ত্রণালয় একই ভেন্যুতে
কেন্দ্রীয়ভাবে এ উৎসবের আয়োজন
করলেও গত বছর থেকে পৃথক উৎসব পালন
করা হচ্ছে। জাতীয় এ উৎসবকে পৃথককরণ
করায় নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা
পরিবারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব বলেন,
প্রাথমিক শিক্ষা স্তর ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত
বাস্তবায়নের জন্য ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি পর্যন্ত
কর্তৃত্বের রশি টানাটানি থাকায় মৌন
রেষারেষিতে একসঙ্গে কোনো কাজ
করতে চায় না দুই মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি
প্রাথমিক মন্ত্রণালয়কে ৮ম শ্রেণি
পর্যন্ত বুঝিয়ে দেওয়ার পরও পরীক্ষা
গ্রহণে অনিহা প্রকাশ করে প্রাথমিক ও
গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে এ পরীক্ষা
অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
তত্ত্বাবধানে। পাঠ্যপুস্তক উৎসব নিয়ে এ
বিরোধ আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল
ইসলাম খান বলেন, এটি একটি জাতীয়
উৎসব। একসঙ্গে করতে হবেÑ কোথায়ও
বাধ্যবাধকতা নেই। এ কারণে প্রাথমিক
মন্ত্রণালয় বই উৎসবকে আলাদাভাবে
পালন করবে। আগে একসঙ্গে হলেও গত দুই
বছর থেকে আলাদা করার কারণ জানতে
চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য
করতে রাজি হননি।
আর মাত্র তিনদিন। দেশব্যাপী
পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের প্রস্তুতি প্রায়
শেষ। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও
মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ২৬ লাখ
শিক্ষার্থীর জন্য ৩৬ কোটি ২১ লাখ নতুন
পাঠ্যবইও প্রায় প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই প্রায়
সব উপজেলার স্কুলে পৌঁছে গেছে এসব
বই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন